সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন
বুধবার রাতে ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক অর্থ সম্পাদক এমদাদের বাসায় ঢুকে স্ত্রী ও সন্তানের সামনে তার ওপর হামলা করে মাসুদ। এতে এমদাদ আহত হন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানায় মাসুদ (৪০) ও অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করে এমদাদ মামলা করেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার সেগুনবাগিচার বাসা থেকে মাসুদকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। ঢাকায় মাসুদের গ্রেফতারের খবরে ভৈরব উপজেলা খাদ্যগুদামে থাকাকালে তার ঘুস ও দুর্নীতিসহ নানা অপকীর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। ভৈরব উপজেলা খাদ্যগুদামে ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্য পরিদর্শক পদে মাসুদ কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল খাদ্যগুদামে তিনি কর্মরত। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকেন।
ভৈরবে থাকাকালে মাসুদের বিরুদ্ধে ঘুস-দুর্নীতিসহ নানা কেলেংকারির অভিযোগে তদন্ত হয়। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর খাদ্যমন্ত্রীর কাছে স্থানীয় অটোরাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ লিখিত অভিযোগ করেন। চাল সরবরাহ বাবদ তার কাছ থেকে মাসুদ ২২ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন। একই বছরে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে আরেক অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন লিখিত অভিযোগ করেন। তার কাছ থেকে মাসুদ ২৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন। এ দুজনের অভিযোগ খাদ্য অধিদপ্তর থেকে তদন্তে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-তিনি কখনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতেন না। অনেক সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে যুবলীগের সাবেক নেতার পরিচয়ে তিনি দুর্ব্যবহার করতেন। অনেক সময় যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাটের নাম ভাঙিয়েও তিনি অপকর্ম করতেন। মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-ঘুস-দুর্নীতি করে তিনি ঢাকায় ফ্লাট কিনেছেন। এ ছাড়া তিনি স্ত্রীর নামে ও বেনামে ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি করেছেন। এসব ঘটনায় মাসুদের বিরুদ্ধে যুগান্তরে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়। এ কারণে যুগান্তর প্রতিনিধিকে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দেন এবং ফেসবুকে অশালীন বাক্য ব্যবহার করেন। অটোরাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘুস না দিলে মাসুদ চাল গুদামে নিতেন না। প্রতি টনে তিনি দুই হাজার টাকা করে ঘুস নিতেন। আমি তাকে ২৫ লাখ টাকা ঘুস দিতে বাধ্য হয়েছি। এ ব্যাপারে দুদকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাইনি। রাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ জানান, গুদামে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে আমি মাসুদকে ২২ লাখ টাকা ঘুস দিতে বাধ্য হয়েছি। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিশোরগঞ্জের সাবেক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানভির আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান, মাসুদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। এ ব্যাপারে পরে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানি না। কারণ আমি সেখান থেকে বদলি হয়েছি। উল্লেখ্য, মাসুদ ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। দলীয় কর্মকাণ্ড মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণের নানা ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি চাকরির আগে তিনি যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।